গৌড়বঙ্গের লোকসাহিত্য : প্রসঙ্গ কৌতুকরস
প্রবন্ধসার :
সাহিত্যের নবরসরত্নের মধ্যে দ্বিতীয় রত্ন হাস্যরস। ‘হাস’ স্থায়ী ভাব থেকে এর উদ্ভব।
হাস্যরসের বিভিন্ন উপধারার মধ্যে অন্যতম হল কৌতুকরস (Fun)। হাসির সঙ্গে পৃথিবীর যে কোনো
স্থানের, যে কোনো বয়সের মানুষের যোগ অচ্ছেদ্য। অবশ্য আধুনিক-উত্তর সময় পর্বে এই
পরম্পরাগত সত্য জিজ্ঞাসা চিহ্নের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে। আবার এও সত্য আমাদের হাজার
বছরের পথ পরিক্রমায় সুখ-দুঃখ, আনন্দ-যন্ত্রণা পাওয়া-না পাওয়া, যূথবদ্ধতা-নিঃসঙ্গতা,
পারস্পরিক বিনিময়-পরশ্রীকাতরতা সহোদরার মতো সমান্তরাল স্রোতধারায় প্রবহমান। তবে একুশ
শতকের যন্ত্র নিয়ন্ত্রিত জীবন ভাবনায় ‘সকল লোকের মাঝে ব’সে/ আমার নিজের মুদ্রাদোষে/ আমি
একা হতেছি আলাদা?’— এই জিজ্ঞাসা চিহ্নের অঙ্কুশাগ্র নাগরিক জীবনের পাশাপাশি গ্রাম
জীবনকেও মাত্রাধিক্যে বিদ্ধ করার প্রবণতা লক্ষণীয় ভাবে ক্রমবর্ধমান।
সভ্যতার ‘অস্বাভাবিক’ অগ্রগতির ফলে মানুষ ক্রমশ হাসতে ভুলে যাচ্ছে অথচ হাসি মনুষ্য-
বৃক্ষের শেকড়। শেকড়কে উপড়ে ফেলে বৃক্ষে জল সিঞ্চন— কালিদাসীয় পথ অনুসরণ। পরিবেশকে
সজীব রাখার জন্য যেমন এক একটি বৃক্ষ নয় বনাঞ্চল প্রয়োজন তেমনি মানব সভ্যতাকে টিকিয়ে
রাখার জন্য মানুষের যূথবদ্ধ সামাজিক পরিচয় প্রয়োজন। লোকায়ত জীবন এখনো নিজস্ব স্থানিক
সংস্কৃতিকে লালন করার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সমাজের বহুস্বরিক আনন্দকে যেভাবে টিকিয়ে রেখে
চলেছেন তা নাগরিক ‘সভ্য সমাজে’র কাছে শিক্ষণীয়। এমন সময়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে লোকসাহিত্যে
কৌতুকরস প্রসঙ্গ বিশ্লেষণ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। তবে আলোচনার অভিমুখের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে
বর্তমান প্রবন্ধ গৌড়বঙ্গ অর্থাৎ দুই দিনাজপুর ও মালদহের লোকজীবন ও সাহিত্যের কৌতুকরস
প্রসঙ্গ আলোচনায় সীমাবদ্ধ থাকবে।
সূত্রশব্দ (Keywords) : ১. হাস্যরস, ২. দিনাজপুর ৩. মালদহ ৪. মনুষ্য-বৃক্ষের শেকড়, ৫. স্থানিক
সংস্কৃতি, ৬. বহুস্বরিক আনন্দ।
https://doi.org/10.37948/ensemble-2021-0301-a023
Views: 1175